শস্যক্ষেত ও ঘরবাড়ির বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। শস্যক্ষেত ছাড়াও কীটনাশক ওষুধ পশুপাখির দেহের বহিঃপরজীবী (যেমন উকুন, আঠালি, মাইটস, মাছি ইত্যাদি) ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রধানত যেসব উপায়ে পশুর কীটনাশক পদার্থ দ্বারা বিষক্রিয়া ঘটে তা হলো-
১. শস্যক্ষেত বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করা হয় এবং সেসব জমির শস্য বা ঘাস খেয়ে।
২. পশুর খাদ্যে কোনভাবে কীটনাশক পদার্থ মিশে গেলে তা খেয়ে।
৩. পশুর বহিঃদেশের পরজীবী বিনাশের জন্য ব্যবহৃত বিষ স্প্রে বা ডিপিং করার সময় তার ঘনত্ব বেশি হলে।
৪. শত্রুতাবশত চামড়ার লোভে পশুকে বিশ খাওয়ালে।
প্রধানত তিন শ্রেণির কীটনাশক পদার্থ ব্যবহার হয়।
১. অর্গানোফসফেট ২. কার্বামেট ৩. ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন।
অর্গানোফসফেট কম্পাউন্ডস ও কার্বামেট উভয় ধরনের কীটনাশক পদার্থ পশুর দেহে একই প্রক্রিয়ায় বিষক্রিয়া ঘটায়। উভয় ধরনের কীটনাশক প্রাণিদেহে কোলিন এস্টারেজ এনজাইম সৃষ্টি হ্রাস করে এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুর উত্তেজনায় পশুর দেহে লালাক্ষরণ, ডায়রিয়া ও পেশির আড়ষ্ঠতা ইত্যাদি উপসর্গ সৃষ্টি করে।
কীটপতঙ্গের কবল থেকে ফসল রক্ষার জন্য এবং পশুর দেহের বিভিন্ন বহিঃপরজীবী বিনাশের জন্য এই শ্রেণির পদার্থ বিভিন্ন নামে বাজারে পাওয়া যায় যেমন-প্যারাথিওন, ম্যালাথিওন, ডায়াজিনন, কোমাফস ইত্যাদি (এগুলো হচ্ছে অর্গানোফসফরাস কম্পাউন্ড)। আবার কার্বামেট কীটনাশক হিসেবে বাজারে পাওয়া যায় সেভিন, ফুরাডন, বেগল ইত্যাদি। উভয় ধরনের কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় পশুদেহে শ্বাসকষ্ট, লালাক্ষরণ, পেশির আড়ষ্ঠতা ও সংকুচিত অক্ষিতারা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। চোখের মনির সাড়া খুবই দুর্বল অথবা থাকবে না। কার্বামেট জাতীয় কীটনাশক গোলকৃমি, ব্লু ফ্লাই ও অন্যান্য মাছির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যবহার হয়। ডিপিং ও ডাস্ট হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। ৪-৫% ম্যালাথিয়ন ডাস্টিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়। এক কেজি ছাইয়ের সাথে ৪০সষ ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে তা ডাস্টিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়। আবার ৫% ঝবারহ ধূলিম্লানের মাধ্যমে উকুন নিধনে বেশ কার্যকর। দশ লিটার পানিতে ১সষ ডায়াজিনন মিশিয়ে ভেড়াকে ডিপিং করা হয়। ব্রিটেনে ঝযববঢ় ঝপধনরবং এ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে একবার এবং শরৎকালে একবার মোট দুইবার প্রতিটি মেষকে ডিপিং করা বাধ্যতামূলক।
রোগ নির্ণয়
* বিষযুক্ত ঘাস বা খাদ্য খাওয়ার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপসর্গ (শ্বাসকষ্ট, লালাক্ষরণ, পেশির আড়ষ্ঠতা, সংকুচিত অক্ষিতারা, অধিক গা ঘামা) পরীক্ষা করে এই বিষক্রিয়া শনাক্ত করা যায়।
* রক্তে কোলিন এস্টারেজ হ্রাস মাত্রা এবং প্রস্রাবে অর্গানোফসফরাস কম্পাউন্ড বৃদ্ধি মাত্রা নির্ণয় করে এই বিষক্রিয়া শনাক্ত করা যায়।
* সন্দেহজনক খাদ্য বিশ্লেষণ করে অর্গানোফসফরাস শনাক্ত করা যায়।
অর্গানোফসফরাস কম্পাউন্ড ও কার্বোমেট পদার্থের বিষক্রিয়ায় করণীয়
যেসব কীটনাশক ওষুধে অর্গানিকফসফেট থাকে এদের বিষক্রিয়ায় চিকিৎসা হিসেবে অ্যাট্টোপিন দেয়া হয়। বলা যেতে পারে অ্যাট্রোপিন সালফেট অর্গানোফসফরাস বিষক্রিয়ায় একটি যথাযথ ও অনুমোদিত চিকিৎসা মানুষ ও পশুপাখি উভয়ের ক্ষেত্রেই। পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির প্যারাথিন জাতীয় অর্গানিক ফসফেট কীটনাশক ওষুধের বিষক্রিয়া চিকিৎসার জন্য ০.৮ মিলিগ্রাম অ্যাট্রোপিন সালফেট ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেয়া হয়। যদি আধ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাট্রোপিনে কোন ফল পাওয়া না যায় ও বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলো যেমন উদরাময়, বমি, চোখের তারার সংকোচন, অধিক গা ঘামা ও মুখ দিয়ে অধিক লালা পড়া প্রভৃতি লক্ষণ সুস্পষ্ট হয় তখন দুই মিলিগ্রাম অ্যাট্রোপিন সালফেট ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন প্রতি ঘণ্টায় দিতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দেহে অ্যাট্রোপিনের ক্রিয়ার সঠিক প্রকাশ ঘটে। অ্যাট্রোপিন সালফেট একটি এন্টিকোলিনার্জিক ওষুধ যা স্থানীয় বাজারে অ্যাট্রোপিন ও অ্যাট্রোপিন সালফেট (এডরুক, কেমিস্ট ল্যাব.) নামে পাওয়া যায়। চোখের মনি সংকুচিত থাকলে অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন শিরায় দিতে হবে।
* গরুর প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.২৫ মিলিগ্রাম এবং মেষ ও ছাগলের প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য এক মিলিগ্রাম হিসেবে এক-তৃতীয়াংশ শিরায় এবং অবশিষ্টাংশ পেশির মধ্যে ইনজেকশন দিতে হয়। উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে ৪-৫ ঘণ্টা পর পর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। তবে অতি তীব্র অবস্থায় এই চিকিৎসা কার্যকর নাও হতে পারে। অ্যাট্রোপিন সালফেট স্নায়ুর প্রান্তে জমায়েত অ্যাসিটাইল কোলিনের ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
গবাদিপশুতে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন (Atropine injection, Bremer Pharma) । এছাড়া এন্টিকোলিনার্জিক ও এন্টিস্পাজমোডিক ড্রাগ হিসেবে টেকনো ড্রাগ অ্যাট্রোভেট ইনজেকশন বাজারজাত করছে। অ্যাট্রোভেট গরু, মহিষ, ঘোড়া, কুকুর ও বিড়ালের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। অ্যাট্রোভেট এর কাজ হচ্ছে অনৈচ্ছিক পেশির সংকোচন হ্রাস করা, চোখের তারা প্রসারিত করা।
* অর্গানোফসফরাস বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে গরু ও শূকরে অ্যাট্রোপিন (Bremer Pharma) প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৬০ মিলিলিটার, ছাগল ও ভেড়ায় ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ব্যবহার করা হয়। কুকুর ও বিড়ালে ৩ মিলিলিটার প্রতি ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ব্যবহার করতে হবে। প্রথম ডোজের তিন ভাগের এক ভাগ শিরার মধ্যে এবং ২/৩ ভাগ মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। প্রয়োজনে আধা ঘণ্টা পর পর বা অবস্থার ওপর নির্ভর করে পুনরায় মাংসে অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে।
* হায়োসিন বিউটাইল ব্রোমাইড একটি কোয়াটারনারি অ্যামোনিয়া। এটি অ্যাট্রোপিনের মতো এন্টিকোলিনার্জিক হিসেবে কাজ করে। তবে অ্যাট্রোপিনের চেয়ে কম শক্তিশালী ও ক্রিয়া অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। হায়োসিন বিউটাইল ব্রোমাইড বাজারে বুটাপেন বাসকন ১০,২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। ট্যাবলেট হিসাবে ২০সম মানুষের ক্ষেত্রে দিনে চারবার মুখে খাওয়ানো হয়।
* অ্যাক্টিভেটেড চারকোল গরুর জন্য ০.৯ কেজি এবং ছাগল/ ভেড়ার জন্য ০.৫ কেজি পানির সাথে মিশিয়ে স্টমাক টিউবের সাহায্যে খাওয়াতে হবে। বাজারে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল VetDtox নামে বিক্রি হয়। VetDtox প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৭৫ গ্রাম হিসেবে খাওয়াতে হয়। Activated charcoal এটি পাকস্থলীতে বিষ শোষণ বন্ধ করে। সায়ানাইড ছাড়া প্রায় সব বিষক্রিয়ায় চারকোল ব্যবহার হয়।
* ত্বকে লেগে বিষক্রিয়া হলে সাবান ও পানি দিয়ে ত্বক উত্তমরূপে ধুয়ে দিতে হবে।
* অর্গানোফসফরাস বিষক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট ও ডেক্সটোজ স্যালাইন শিরায় ইনজেকশন দেয়া যায়। ক্যালসিয়াম প্রিপারেশন হিসেবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ক্যালম্যাফস (Calmaphos, Bremer Pharma), ক্যাল-ডি-ম্যাগ (Cal-D-Mag injection, Renata Ltd), সানক্যাল ভেট (Sancal Vet I/M, Novartis Ltd) সানক্যাল ভেট মাংসপেশিতে ১৫ মিলি করে প্রয়োগ করা হয়। ক্যালমাফস গরু ও ঘোড়াতে ১৫০সষ শিরার মধ্যে আস্তে আস্তে ইনজেকশন করতে হবে। বাছুর, ছাগল ও ভেড়াতে ৫০সষ শিরার মধ্যে আস্তে আস্তে ইনজেকশন করতে হবে। শিরায় প্রয়োগের আগে ইনজেকটেবল সলিউশনকে শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার জন্য হালকা গরম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওধুধের ঈষদুষ্ণ পানির ভেতর অল্প কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পর ব্যবহার করতে হবে। শিরায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে ওষুধ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রয়োগ করতে হয়। পেশির খিচুনি ও কম্পন তীব্র আকার ধারণ করলে ডায়াজিপাম ইন্ট্রামাসকুলার বা ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেয়া যায় এবং প্রয়োজন হলে ৪ ঘণ্টা পর পর আবার দেয়া যায়। ডায়াজিপাম বাজারে ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও সাপোজিটরি আকারে পাওয়া যায়। এই ওষুধ বাংলাদেশের বাজারে জি ডায়াজিপাম (G-Diazepam), Relaxen, Sedil, Fizepam ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। জি-ডায়াজিপাম প্রতি ট্যাবলেটে ৫ মিলিগ্রাম ডায়াজিপাম এবং প্রতি ২ মিলিলিটার এম্পুলে ১০ মিলিগ্রাম ডায়াজিপাম থাকে।
* লবণ মিশ্রিত ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ালে গরু বা মহিষে বমি হতে পারে যার মাধ্যমে বিষ পেট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
*Stomach tube পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে সেখানকার বিষাক্ত পানি বের করা যেতে পারে।
* এসিড জাতীয় বিষ খেলে চুনের পানি, চকগুঁড়ো বা মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া খাইয়ে দিতে হবে।
* ক্ষারজাতীয় বিষ হলে লেবুর রস, ভিনেগার বা তেঁতুল গোলা পানি খাওয়াতে হবে। অথবা Tartaric acid ১০% চায়ের লিকারের সাথে খাওয়াতে হবে।
* ফসফরাস জাতীয় বিষ হলে এক মগ পানিতে কয়েকটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দানা ফেলে দিয়ে পানি ভালো করে গুলে গরু/মহিষকে খাওয়াতে হবে।
* শরীর থেকে পানি বের করার ওষুধ Frusemide প্রয়োগ করলে রক্ত মিশ্রিত বিষ প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসবে। তবে পশুকে বেশি করে পানি ও ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে।
* ধুতরা পয়েজনিং এর ক্ষেত্রে গরম পানি, রঙ চা, রঙ কফি Antidote প্রতিবিষ হিসেবে কাজ করে।
*বেশি অ্যালকোহল বা মদ খেলে লেবুর রস বা কালোকফি Antidote হিসেবে কাজ করে।
* কেরোসিনের বিষক্রিয়ায় বমি করানো যাবে না। মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লিকুইড প্যারাফিন ২৫০সষ খেতে দিলে রক্তে কেরোসিনের শোষণ বাধাগ্রস্ত হবে। পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ দিতে হবে যাতে নিউমোনিয়া বা অন্যকোনো সংক্রমণ না হতে পারে।
* পশুর শরীরে খিঁচুনি থাকলে সঙ্গাহীন অবস্থায় বমি করানো যাবে না। কিছু বিষ যা প্রবেশের সময় মুখ, মুখগহবর ও অনুনালিতে প্রদাহের সৃষ্টি করে এই সব ক্ষেত্রে বমি করানো উচিত নয়। কারণ বমি করার সময় উল্লিখিত পদার্থগুলো পুনরায় ক্ষতিসাধন করে ক্ষতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
অর্গানোফসফরাস কম্পাউন্ড (ম্যালাথিয়ন, ডায়াজিনন, কোমাফস) এর মতো ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন নামক কীটনাশক দ্বারাও গৃহপালিত পশুর বিষক্রিয়া হতে দেখা যায়। প্রধানত ডিডিটি, বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড, লিন্ডেন, অ্যালড্রিন, ডায়ালড্রিন, ক্লোরডেন, টক্সোফেন, আইসোডিন, এনড্রিন ও হেপ্টাক্লোর ইত্যাদি ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। খাদ্য গ্রহণ, শ্বাস গ্রহণ ও ত্বকের মাধ্যমে এই গ্রুপের কীটনাশক দেহে প্রবেশ করে। বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড, অ্যালড্রিন, ডায়ালড্রিন ও ক্লোরডেন সহজেই ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করে। প্রাপ্ত বয়স্ক পশু অপেক্ষা বাড়ন্ত বয়সী পশু অধিক সংবেদনশীল।
এই গ্রুপের কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় পশুর একদম ক্ষুধা থাকে না। পেশির কম্পন, খিঁচুনি ও পক্ষাত দেখা যায়। ত্বকের মাধ্যমে বিষক্রিয়া ঘটলে সাবান পানি দিয়ে স্থানটি উত্তমরূপে পরিষ্কার করে নিতে হবে। খাদ্যের মাধ্যমে বিষক্রিয়া হলে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল বড় গাভীকে (৪০০ কম boly weight) দুই কেজি পর্যন্ত ড্রেঞ্জের মাধ্যমে খাওয়াতে হবে। পরে প্রত্যহ খাদ্যের সাথে ১ কেজি করে মিশিয়ে দুই সপ্তাহ খাওয়াতে হবে। সোডিয়াম ফেনোবারবিটোল প্রতিটি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত গাভীকে প্রত্যহ ৫ গ্রাম করে একমাস খায়ালে দেহ থেকে ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন দ্রুত নিঃসরণ ঘটে। এক্ষেত্রে ক্লোরাল হাইড্রেট ব্যবহার করা যায়।
বলদ গরুর এলড্রিন বিষক্রিয়ায় ক্লোরাল হাইড্রেট ৩০ গ্রাম এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৬০ গ্রাম পর্যন্ত পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে ও ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট ২৫০সষ শিরায় ইনজেকশন করে এবং ২সম অ্যাট্রোপিন সালফেট হিসেবে মাংসপেশির মধ্যে ৫ ঘণ্টা পর পর ৩টি ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। এছাড়া ক্লোরাল হাইড্রেট, ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট ও অ্যাস্ট্রিনজেন্ট মিকশ্চার দিয়ে চিকিৎসায় সুফল পাওয়া গেছে।
ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট বাজারে ক্যাল-ডি-ম্যাগ (Cal-D-Mag injection Renata Ltd) নামে পাওয়া যায়, যা গরু/ মহিষকে ২০০সষ হিসেবে শিরায় ও ছাগল/ ভেড়াকে ২৫সষ শিরায় অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রয়োগ করতে হবে। Cal-D-Mag এর বোতল ঈষদুষ্ণ পানির ভেতরে অল্প কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পর ব্যবহার করতে হবে।
* সুস্থ স্নায়বিক উপসর্গে পশুকে সিডেটিভ (Sedative) জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। সিডেটিভ প্রয়োগের উদ্দেশ্য হচ্ছে উদ্বেগ অস্থিরতার উপশম।
*ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন বিষক্রিয়ায় লারগ্যাকটিল (Largactil-Chlorpromazire hydrochloride) ব্যবহার করা যায়। ক্লোরপ্রোমাজিন হাইড্রোক্লোরাইড সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ব্যবহার করা নিষেধ। বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে অ্যালকোহল, নারকোটিক, বারবিচ্যুরেট বা অন্যান্য স্নায়ু অবসন্নকারী ওষুধের প্রভাবে চেতনহীন থাকে। ল্যারগ্যাকটিল ২৫,৫০ অথবা ১০০ মিলিগ্রাম ক্লোরপ্রোমাজিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট এবং প্রতি ২ মিলিলিটার এম্পুলে ৫০ মিলিগ্রাম ক্লোরপ্রোমাজিন ইনজেকশন আকারে পাওয়া যায়।
* ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন বিষক্রিয়ায় ব্যবহৃত ফেনোবারবিটল বাজারে ফেনোবারবিটোন ৩০ অথবা ৬০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। স্বল্পমাত্রার ফেনোবারবিটোন অস্থিরতা উপশমকারী এবং উচ্চমাত্রা নিদ্রাকারক হিসেবে কাজ করে। গরুকে এনড্রিল বিষক্রিয়ায় বা ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন বিষক্রিয়ায় প্রতিদিন ৫ গ্রাম হিসেবে এক মাস খাওয়াতে হয়।
মানুষের ক্ষেত্রে এনড্রিল বিষক্রিয়ায় করণীয়
এজাতীয় পদার্থ পান করলে এর ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। পান করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মাথাব্যথা, ঘাম বের হওয়া, অতিরিক্ত লালা, পেটে কামড় দেয়া ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি, দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে। হাসপাতাল বেশি দূরে হলে নিম্নের কাজগুলো করা যেতে পারে-
* রোগীর গায়ের কাপড়-চোপড় খুলে সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতে হবে
* বমি করাতে হবে এই জন্য স্বল্প গরম লোনা পানি পান করাতে হবে অথবা তিতা কোনো দ্রব্য মুখের মধ্যে দিয়েও বমি করানো যেতে পারে (যথা সিরাপ- ইপিফাক)।
* শ্বাসনালি পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগীকে খোলামেলা বাতাসে রাখতে হবে।
* ডেক্সটোজ স্যালাইন দিতে হবে।
* চোখের মনি সংকুচিত থাকলে শিরায় অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন দিতে হবে।
গবাদিপশুকে ইউরিয়া বিষক্রিয়ায় করণীয়
* গরুর প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য খাদ্যে ০.৩৩ গ্রাম ইউরিয়া রক্তে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে আবার ০.৪৪ গ্রাম ইউরিয়া/কেজি দৈহিক ওজনের ক্ষেত্রে ১০ মিনিটের মধ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ হিসেবে পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ফেনাযুক্ত লালাঝরা, মাংসপেশির কম্পন, হাঁটতে অসম্মতি দেখা যাবে এবং ১-১.৫ গ্রাম/ কেজি পশুর মৃত্যু ঘটায়। ইউরিয়া বিষক্রিয়া দেখা গেলে আক্রান্ত প্রাণীকে প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি (২০-৪০ লিটার) খাওয়াতে হবে। ছাগল ও ভেড়াকে ০.৫-১ লিটার ভিনেগার এবং গরুকে ২-৪ লিটার ভিনেগার খাওয়াতে হবে। মাংসপেশির কম্পনের ক্ষেত্রে ২০০ মিলিলিটার ক্যাল-ডি-ম্যাগ শিরায় ইনজেকশন করতে হবে। ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে ৫% ডেক্সট্রোজ স্যালাইন শিরায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মো. আকতার হোসেন*
*প্রশিক্ষক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম, মোবাইল: ০১১৯৮০৮৯৫৭০